প্রিজন ভ্যান থেকে বুখারীর পাঠদান করলেন মামুনুল হক: |
নারায়ণগঞ্জের আদালতপাড়ায় রচিত হলো হৃদয়বিদারক সুকরুণ ইতিহাস। নিয়তির নির্মমতায় দুই বছরেরও অধিক সময় পার হয়ে গেছে কারাগারে। এই দুঃসহ সময়ে বাইরে বয়ে গেছে প্রলয়ঙ্করি ঝড় তোফান।ঘটে গেছে অনভিপ্রেত বহু ঘটনা। চোখে না দেখলেও কর্ণকুহুরে শুনে বদ্ধ ঘরে বুক ভাসিয়েছেন নিশ্চয়ই। প্রকোষ্ঠের দুর্বিষহ জীবন যাত্রায় দীপ্তিমান চেহারার জৌলুস ও ঔজ্জ্বল্য হারিয়েছেন আরও আগেই। মাঝে মাঝে আদালত প্রাঙ্গণে একটুখানি দেখার অপেক্ষায় নিষ্পাপ শিশুদের নির্বাক অপেক্ষা আর মায়াবী চাহনী ভেতরকে দুমড়ে মুচড়ে দেয়। দিনরাত সারা বাংলা চষে বেড়ানো সুস্থ সবল তরতাজা মধ্যবয়সী আলেমকে লাঠিতে ভর করে চলতে দেখলে হাহাকার করে উঠে বহু মানুষের হৃদয়। সবকিছু উলট পালট হয়ে গেলেও কন্ঠের বলিষ্ঠতা আর চেতনার দৃঢ়তা কমেনি একটুও। তারই প্রমাণ মিলল আজ নারায়ণগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গণে।
প্রিজন ভ্যানের সামনে তখন ভক্তবৃন্দ ও মাদ্রাসা ছাত্রদের প্রচণ্ড ভীড়। প্রাণের পুরুষকে এক নজর দেখতে সকলের দৃষ্টি একযোগে এক দিকে নিবদ্ধ। ঠিক তখনই ভ্যানের ভেতর থেকে চিরচেনা কন্ঠে বেজে উঠল হাদীসের সুর। অবলীলায় দিয়ে গেলেন সহীহ বুখারীর উদ্বোধনী পাঠ। খণ্ডিত হাদীসের ব্যাখ্যায় দৃঢ়চেতা ভাষায় তর্জনী নাড়িয়ে নাড়িয়ে মামুনুল হক বললেন, “আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য হিজরত করার অর্থ হলো সবকিছু ছেড়ে দেয়া। আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সন্তুষ্টির জন্য সমস্ত স্বার্থ, সমস্ত মিথ্যা ও সমস্ত অন্যায় ত্যাগ করা। হিজরতেরএই শিক্ষা দিয়েই বুখারীর পাঠ শুরু হয়েছে। তোমরা যারা বুখারী পড়বে, হিজরতের এই দৃঢ়চেতনা বক্ষে ধারণ করবে”। ছাত্রদের কান্নার আওয়াজে তখন পরিবেশ স্তব্ধ হয়ে উঠলো। ঠিক কী কারণে হঠাৎ বুখারীর পাঠদান করলেন, তা নিশ্চিত করে না বলা গেলেও ধারণা করা হচ্ছে যে, এবছর মামুনুল হকের বড় ছেলে দাওরাতুল হাদীস ক্লাসে ভর্তি হবে। নব্বইয়ের দশক থেকে নিয়মিত বুখারীর পাঠদান করছিলেন মামুনুল হক। এ যাবৎকাল হাজার হাজার ছাত্র তাঁর কাছে বুখারীর পাঠ নিলেও এ বছর সরাসরি তার পাঠ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ছেলে। ছেলের শিক্ষাজীবনের অপূর্ণতা ঘোচাতে এবং সান্ত্বনা দিতেই হয়তো তিনি সহীহ বুখারীর উদ্বোধনী পাঠদান করলেন। হাদীসের যে সবক আজ মামুনুল হক দিয়ে গেলেন, অনেকের কাছে তিনি এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
আজ ২৫ এপ্রিল দুপুরে নারায়ণগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক নাজমুল হক শ্যামলের আদালতে তাকে তোলা হয়।
এর আগে, একই দিন সকাল সাড়ে ৯টায় কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে তাকে কাশিমপুর কারাগার থেকে নারায়ণগঞ্জের আদালতে আনা হয়। ন্যায় বিচারিক আদলতে মামুনুল হক বেকসুর মুক্তি পাবেন খুব দ্রুতই এমনটাই প্রত্যাশা সবার।