Tuesday, April 4, 2023

রজনীর আবর্তনেই পুড়ে ছাই হাজারো রঙিন স্বপ্ন!

 

রজনীর আবর্তনেই পুড়ে ছাই হাজারো রঙিন স্বপ্ন!

রাজধানীর গুলিস্তানের বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে পোশাক ব্যবসায়ীদের সর্বস্ব!

প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিসের প্রায় ৫০ টি ইউনিটের পাশাপাশি সেনা ও

বিমান বাহিনীর প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।

কিন্তু ততক্ষণে ভস্মীভূত হয়ে গেছে সবকিছু- কাপড়,টাকা ও হাজারো মানুষের বুকে লালন করা রঙিন স্বপ্ন।


আজ সকাল ৬টা ১০ মিনিটের সময় আগুনের খবর পাওয়া যায় বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস।

বঙ্গবাজার মার্কেটের নিকটেই ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তর অবস্থিত হওয়ায় খবর পাবার

দুই মিনিটের মধ্যেই সেখানে প্রথম ইউনিট পৌঁছে যায়।

এরপর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে ইউনিটের সংখ্যা। কিন্তু এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় আগুন

মুহুর্তের মধ্যেই ছড়িয়ে যায়।


ভয়াবহ এই আগুনে বঙ্গবাজার মার্কেট, মহানগর মার্কেট, আদর্শ মার্কেট ও গুলিস্তান মার্কেট

পুরোপুরি ভষ্মীভূত হয়। পার্শ্ববর্তী এনেক্সকো টাওয়ার এবং আরও কিছু ভবনও

ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা যায়।

ফায়ার সার্ভিসের তিন সদস্যসহ মোট ৮ জন আহত ও অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

তবে কারও মৃত্যুর খবর এখনও পাওয়া যায়নি।

 আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে এখনো স্পষ্টভাবে কিছুই জানা যায়নি।

ঘটনার তদন্তে ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।  


ঈদের নিকটবর্তী সময়ে বেশ ভালভাবেই চলছিল বঙ্গবাজারের কাপড়ের ব্যবসা।

ঈদকে কেন্দ্র করে সকলেই ব্যাপক মালামাল উঠিয়েছিলেন দোকানে।

এক রাতের ব্যবধানে সকল কিছুরই পরিবর্তন ঘটে গেল! 


কালও যে মার্কেটটি ব্যাপক ব্যস্ততায় মোড়ানো ছিল, আজ সেটি নিরব, নিশ্চল!

যে লোকগুলো গতকাল রাতেও কোটিপতি হয়ে সুখনিদ্রায় বিভোর ছিলেন,

আজই তারা নি:স্ব, অসহায়!

আগুন নেভানোর সময়কালে মার্কেট এলাকায় দেখা যায় কাপড় ব্যবসায়ীদের কান্না আর আহাজারী! 


এক ব্যবসায়ী বলেন, "আমার অধীনে ৪০ জন কর্মচারী কাজ করত। প্রায় ২ কোটি টাকার মালামাল ছিল

আমার দোকানে। ক্যাশ ছিল ১৫ লাখ টাকার। সবকিছুই শেষ হয়ে গেছে!"


আরেক কাপড় ব্যবসায়ী বলেন, " আয়া দেখি আগুন আর আগুন।

আমার ১ কোটি টাকার পাঞ্জাবি পুড়ে ছাই!"


১৯৯৫ সালে একবার ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যায় বঙ্গবাজার। পরে নতুন করে গড়ে তোলা হয় ওই মার্কেট।

সর্বশেষ ২০১৮ সালেও আগুন লেগে মার্কেটের গুলিস্তান ইউনিটের কয়েকটি দোকান পুড়ে যায়।


ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন বঙ্গবাজার মার্কেট চারটি ইউনিটে বিভক্ত।

বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স, গুলিস্তান ইউনিট, মহানগর ইউনিট ও আদর্শ ইউনিট মিলিয়ে মোট

দোকানের সংখ্যা প্রায় ২ হাজার ৩৭০টি।


ঈদকে কেন্দ্র করে এই মানুষগুলোর এত স্বপ্ন, এত ভরসা, সবকিছুই মিশে গেল মাটির সাথে।

এখন তাদের একমাত্র ভরসা আল্লাহ তায়ালাই।



আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন, 


"আমি তোমাদেরকে কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা

অবশ্যই পরীক্ষা করব। তুমি সুসংবাদ দাও ধৈর্য ধারণ কারীদেরকে। 


(সূরা বাকারা, আয়াত নম্বরঃ ১৫৫)


অন্যত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা ইরশাদ ফরমান, "নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন" 

( সূরা বাকারা, আয়াত নম্বরঃ ১৫৩)


রমাদ্বানের এই মহিমান্বিত মাসে আমরা সকলেই তাদেরকে আমাদের দোয়ায় শামিল রাখি,

যেন আল্লাহ তায়ালা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের উত্তম রিযিকের ব্যবস্থা করে দেন এবং

তাদের সবরে জামিল দান করেন এবং এই ক্ষতির বিনিময়ে আল্লাহ তাদের দুনিয়া ও

আখিরাতের কল্যাণ দান করেন।